রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০২ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রোজার শেষ সময়ে করণীয়

শায়খ ড. হুসাইন বিন আবদুল আজীজ:
রমজানের এই শেষভাগের রাতগুলোর বিশেষ ফজিলত ও বিরাট মর্যাদা রয়েছে। কাজেই আপনারা নানাবিধ নেক আমল ও পুণ্য কর্মের মাধ্যমে তার সদ্ব্যবহার করুন এবং সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর রহমত লাভের উপায়ের দিকে দ্রুত অগ্রসর হন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের শেষ দশকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ইবাদতে অধিক মশগুল থাকতেন। -সহিহ মুসলিম

এ রাতগুলোর মূল্যবান সময়কে আপনারা অবহেলায় নষ্ট করবেন না। বরং জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা, নফল নামাজ, দোয়া-দরুদ এবং পরোপকারসহ নানা ইবাদতের মাধ্যমে রাতগুলোকে মূল্যায়ন করার ব্যাপারে যতœবান হোন। আল্লাহর তাওফিক ও তার সাহায্যে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম কদরের রজনী লাভের জন্য শেষ দশকের কোনো একটি রাতও যেন ছুটে না যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে কদরের রজনী অনুসন্ধান করো।’ – সহিহ বোখারি

আপনি কীভাবেই বা এই রাতগুলোকে অবহেলায় বিনষ্ট করবেন, অথচ এই রাতগুলোতে রয়েছে মহা প্রতিদান এবং বিরাট মর্যাদা! হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাতে ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের প্রত্যাশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পেছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি

সুতরাং আপনারা মূল্যবান এই মৌসুমে এবং মর্যাদাপূর্ণ সময়ে শিথিলতা করা থেকে সাবধান থাকুন। কেননা যে ব্যক্তি প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম করে সে সফলকাম ও বিজয়ী হয়। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘হে আমার বান্দারা! আমি তোমাদের কর্মসমূহ তোমাদের জন্য সংরক্ষণ করে রাখি। অতঃপর তোমাদের তার পূর্ণ বিনিময় দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি কল্যাণ লাভ করে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে ব্যক্তি অন্য কিছু অর্জন করে সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে।’

হে মুসলিম! বঞ্চিত হওয়ার সুস্পষ্ট লক্ষণ হলো, আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের ওপর কল্যাণ লাভ, পাপ মোচন এবং মর্যাদা বৃদ্ধির যে উপায় অনুগ্রহপূর্বক প্রদান করেছেন; তা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া। মহিমান্বিত রমজান মাস সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃতই বঞ্চিত রয়ে গেল।’ -মুসনাদে আহমদ

এই শেষ দশকে আল্লাহর বিশেষ তাওফিকের অন্তর্গত হলো, বান্দা কর্র্তৃক ইতিকাফ পালনের সুন্নত জীবিত করা। যাতে সে তার রবের ইবাদতে আত্মনিয়োগ এবং তার ইলাহ ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে মোনাজাতে নির্জনতা অবলম্বন করতে পারে। সেটি কতই সুমিষ্ট মুহূর্ত এবং উপভোগ্য সময়! ইমাম যুহরি (রহ.) বলেন, ‘মুসলিমদের ইতিকাফ পরিত্যাগ করার বিষয়টি বিস্ময়কর! অথচ রাসুল (সা.) মদিনাতে আগমনের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ইতিকাফ পরিত্যাগ করেননি।’

সহিহ বোখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’

সুতরাং হে আল্লাহর বান্দারা! এ রাতগুলোতে বিভিন্ন নেক আমল করার দিকে অগ্রসর হোন এবং আসমান ও জমিনের রব মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে প্রচেষ্টা করুন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকাজ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ -সুরা আল হজ : ৭৭

একজন মুসলিমের ওপর যা ওয়াজিব তার অন্যতম হলো- সদকাতুল ফিতর তথা ফিতরা আদায় করা। আর তা আদায়ের উত্তম সময় হলো, ঈদের নামাজের জন্য বের হওয়ার আগে। তবে ঈদের এক দিন বা দুই দিন আগে ফিতরা আদায় করা জায়েজ।

সদকাতুল ফিতরকে ঈদের নামাজের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা জায়েজ নয়। এর পরিমাণ হলো- নিজ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য থেকে এক ‘সা’ পরিমাণ খাদ্য প্রদান করা। আর প্রচলিত পরিমাপ অনুযায়ী এক ‘সা’ সমান তিন কেজি। সদকাতুল ফিতর প্রদান করতে হবে জাকাতের আট শ্রেণির হকদারদের মধ্য থেকে শুধু ফকির ও মিসকিনকে, অন্যদের নয়। এটিই প্রণিধানযোগ্য মত, যার পক্ষে সুন্নাহর নির্দেশনা রয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজাপালনকারীর অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণের কাফ্ফারা স্বরূপ এবং গরিব-মিসকিনদের আহারের সংস্থান করার জন্য সদকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে তা আদায় করে, আল্লাহর কাছে তা গ্রহণীয় সদকা। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পর তা আদায় করে, তা সাধারণ দানসমূহের একটি দান।’

রমজানের শেষ দিনের সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে যেসব কাজ শরিয়ত অনুমোদিত, তার অন্যতম হলো- তাকবির পাঠ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করো এবং তিনি তোমাদের যে হেদায়েত দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো এবং তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫

যা দ্বারা আল্লাহতায়ালা পাপ মোচন করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন তার অন্যতম হলো- শ্রেষ্ঠ রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ ও সালাম পাঠ করা। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অবতীর্ণ করুন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতারা নবীর জন্য দোয়া-ইস্তেগফার করেন। হে ইমানদাররা! তোমরাও নবীর ওপর সালাত পাঠ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ -সুরা আল আহজাব : ৫৬

হে আল্লাহ! আপনি দুনিয়ার প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে প্রতিদান লাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন; আমাদের ক্ষমা করে দিন। জীবিত ও মৃত সব মুসলিমকে ক্ষমা করুন।

হে আল্লাহ! আপনি অসুস্থদের সুস্থতা দান করুন, দুর্দশাগ্রস্তদের দুর্দশা দূর করুন এবং ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করুন। হে আল্লাহ! আমাদের ওপর উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন, হে আল্লাহ! আমাদের কল্যাণ হয় এমন বৃষ্টি দান করুন, হে আল্লাহ! আমাদের আপনার রহমতের বৃষ্টি দ্বারা সিক্ত করুন। আমিন।

১৪ এপ্রিল মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা। অনুবাদ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION